উচ্চতা বাড়ে পায়ের হাড় লম্বা করার মাধ্যমে!

দীর্ঘদেহী হবার জন্য ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সের মধ্যে অনেকে নানা রকম শরীরচর্চা করেন—এটা শোনা যায়। কিন্তু অপারেশন করিয়ে পায়ের হাঁড় লম্বা করার মাধ্যমে উচ্চতা বাড়ানোর কথা খুব একটা শোনা যায় না।

শুনতে অভিনব মনে হলেও এখন জানা যাচ্ছে, বিশ্বে প্রতি বছর শত শত লোক এমন অপারেশন করাচ্ছেন। এই অস্ত্রোপচার খুবই কষ্টকর, এর দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিও আছে অনেক, কিন্তু কয়েক ইঞ্চি উচ্চতা বাড়াতে অনেকেই এ কষ্ট ও ঝুঁকি মেনে নিচ্ছেন। খবর বিবিসির।

লম্বা হতে এমন অপারেশন করিয়েছেন স্যাম বেকার। হাইস্কুলের শেষ বছরে উত্তীর্ণ হবার সময় স্যাম দেখলেন, তার সহপাঠীরা সবাই ধীরে ধীরে তার চেয়ে লম্বা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমি কলেজে গিয়ে দেখলাম, আমি ছেলেদের চেয়ে তো বটেই—অনেক মেয়ের চেয়েও খাটো। মেয়েরা খাটো ছেলেদের সঙ্গে প্রেম করতে চায় না। কষ্টকর যে কথাটা আমার মাথায় ঘুরতো তা হলো—আমি হয়তো জীবনে কাউকে বিয়ে করতেই পারব না। স্যামের বয়স ৩০। তিনি থাকেন নিউ ইয়র্কে। পা লম্বা করার অপারেশনের কথা জানার পর ব্যাপারটা তাকে চমত্কৃত করে। স্যাম অপারেশনটা করালেন ২০১৫ সালে। তিনি ছিলেন ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি লম্বা। আর এখন তার উচ্চতা হয়েছে ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি (১৭০ সেন্টিমিটার)।

স্যাম বলেন, ডাক্তার আমাকে অপারেশন নিয়ে কথা বলার সময় পরিষ্কার করেই বুঝিয়েছিলেন যে এই শল্যচিকিত্সা অত্যন্ত কঠিন। আমি নিজে উদ্বিগ্ন ছিলাম যে তিন ইঞ্চি লম্বা হবার পর আমার ঠিক কি অবস্থা হবে। আমি কি হাঁটতে পারব? দৌড়াতে পারব? এ প্রশ্নগুলোই মাখায় ঘুরছিল। অপারেশনের পর সপ্তাহে তিন-চার দিন কয়েক ঘণ্টা করে আমাকে ফিজিওথেরাপি নিতে হতো। এটা চলেছিল প্রায় ৬ মাস। লোকে এটাকে কসমেটিক সার্জারি বলে, কিন্তু আমি এটা আসলে করিয়েছিলাম আমার মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভেবে।

যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, ইতালি, তুরস্ক এমনকি ভারতসহ ১২টিরও বেশি দেশে পা লম্বা করার অপারেশন করা হচ্ছে এখন। কোনো কোনো ব্যক্তি এর মাধ্যমে প্রায় পাঁচ ইঞ্চি পর্যন্ত উচ্চতা বাড়াতে পেরেছেন। ঠিক কত লোক এই অপারেশন করিয়েছেন তা বলা কঠিন।

অপারেশনের প্রথমে পায়ের হাঁড়ে একটি ছিদ্র করা হয়। তার পর সেই হাঁড় কেটে দুই-টুকরো করে তার ভেতরে একটি ধাতব রড ঢুকিয়ে দিয়ে তা স্ক্রু দিয়ে এঁটে দেওয়া হয়। এর পর রডটার দৈর্ঘ্য প্রতিদিন এক মিলিমিটার করে ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়। এভাবে রোগীর ইচ্ছা অনুযায়ী উচ্চতা অর্জন করা এবং হাঁড় জোড়া লাগা পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলে।

এই অপারেশন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। যুক্তরাজ্যে কেয়ার কোয়ালিটি কমিশন নিয়ন্ত্রিত কিছু প্রাইভেট ক্লিনিকে এ অপারেশন হয়, যাতে খরচ পড়ে ৫০ হাজার পাউন্ড (সাড়ে ৫৬ লাখ টাকা) পর্যন্ত। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ জন্য ৭৫ হাজার ডলার থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে।

এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং বেদনাদায়ক অপারেশন। এর পর রোগীকে কয়েক মাস ধরে ফিজিওথেরাপি করতে হয় তার হাঁটাচলার শক্তি ফিরে পাবার জন্য। এ সময় প্রতি মুহূর্তে জটিলতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি থাকে। এর মধ্যে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া বা পায়ের হাঁড়ের জোড়া না লাগার মতো যে কোনোরকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।